ভোটের দামামা নেই। এলাকার রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ নিয়ে বেশি বরাদ্দের চাপ নেই এমপিদের কাছ থেকে। কিন্তু তাতে কি স্বস্তিতে রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল?
অবশ্যই না। কারণ, বাজেটের সময় সব দেশের অর্থমন্ত্রীদের চাপে থাকতে হয়। আমাদের অর্থমন্ত্রী কেন ব্যতিক্রম হবেন?
পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন অনেক দূরে এখনও। তাই ভোটের জন্য হয়তো কারো মন জয়ের চেষ্টা করতে হবে না অর্থমন্ত্রীকে। কিন্তু করোনা অতিমারি মোকাবিলায় অধিক ব্যয়ের চাপ তার ওপর। কিন্তু আয় বাড়ে নি।
ফলে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি করে বিপর্যস্ত অর্থনীতিতে প্রাণ ফিরিয়ে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাই হবে তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।
এসব বিবেচনা মাথায় নিয়ে এক বছরেও বেশি সময় ধরে চলা নজিরবিহীন করোনা মহামারির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে অনিশ্চিত আগামীর জন্য ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যিনি আগের মেয়াদে পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর মাহেন্দ্রক্ষণে ৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের ৫০তম বাজেট ঘোষণা করবেন মুস্তফা কামাল।
এমন এক সময় বাজেট দিতে যাচ্ছেন তিনি, যখন একদিকে প্রাণঘাতী করোনার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করার কথা ভাবতে হচ্ছে, অন্যদিকে মাথায় রাখতে হচ্ছে মানুষের প্রাণ বাঁচানোর চিন্তা।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য কী জাদু আছে তার হাতে? এমন কী দাওয়াই দেবেন তিনি, যার মাধ্যমে কালো মেঘ কেটে নতুন আলো উদ্ভাসিত হবে? করোনামুক্ত হবে জনগণ? বাড়বে কর্মসংস্থান, প্রাণ ফিরে পাবে দেশের অর্থনীতি?
এক বছর আগে দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর এর অভিঘাতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকারঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের ফলে ঘুরে দাঁড়ায় অর্থনীতি।
কিন্তু করোনার দ্ধিতীয় ঢেউয়ের প্রভাবে পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। নতুন করে আড়াই কোটি লোক দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে।
অনেকেই চাকরি হারিয়েছে। ছোট কলকারখানাগুলো বন্ধ প্রায়। আয় কমে যাওয়ায় নিম্ন ও মধ্যবিত্তসহ স্বল্প আয়ের অনেকেই কষ্টে আছেন। থমকে আছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড।
এমন কঠিন সময়ে বৈরি পরিবেশের মধ্যে বৃহস্পতিবার (৩ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সঙ্গে নিয়ে নতুন বাজেট ঘোষণা করবেন মুস্তফা কামাল। বর্তমান সরকারের আমলে এটি তার তৃতীয় বাজেট।
এর আগে সংসদ ভবনে সরকার প্রধানের কাছ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদেন করে নেবেন অর্থমন্ত্রী। বুধবার থেকে বাজেট অধিবেশন শুরু হয়েছে।
দেশের খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, জিডিপির প্রবৃদ্ধিকে রঙিন চশমা দিয়ে দেখলে হবে না। পঞ্চাশ বছরে দারিদ্র্য দূরীকরণে বাংলাদেশের যে সাফল্য ছিল, করোনায় সেটা অনেকটা ম্লান হয়ে গেছে। ফলে প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে জীবন-জীবিকায় গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য বাজেটে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের বিষয়ে পরিকল্পনা থাকা জরুরি। করোনা মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতে অগ্রাধিকার দিতে হবে। গরিবের সুরক্ষায় গুরুত দিতে হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে জনগণের উদ্দেশে বলেছিলেন, ‘আগে মানুষের জীবন বাঁচাতে হবে। জীবন বাঁচলে পরে সবকিছু গুছিয়ে নেয়া যাবে।’
কী থাকছে বাজেটে
বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। স্বাস্থ্যে সর্বসাকল্যে প্রায় ৩৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। এর বাইরে করোনার টিকা কিনতে ১০ হাজার কোটি টাকার আলাদা থোক বরাদ্দ থাকছে।
নতুন কোনো করারোপ করা হচ্ছে না। বরং আওতা বাড়িয়ে কর আহরণ প্রক্রিয়া আরও সহজ করার পদক্ষেপ নিচ্ছেন অর্থমন্ত্রী।
সামাজিক নিরাপত্তার আওতা সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। নতুন করে আরও ১২ লাখ বয়স্ক-বিধবা ভাতা পাচ্ছেন। তবে ভাতার পরিমাণ অপরিবর্তীত থাকছে।
কৃষকের সুরক্ষায় এ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হচ্ছে। ১০ টাকা দামে দুস্থ জনগণকে চাল খাওয়ানো ও সাশ্রয়ী দামে খোলা বাজারে চাল বিক্রি অব্যাহত রাখা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য, পাটসহ রপ্তানি খাত উজ্জীবিত রাখতে মোট ৪৯ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি বরাদ্দের প্রস্তাব করা হচ্ছে। প্রবাসীদের সুরক্ষায় প্রণোদনা আরও ১ শতাংশ বাড়ানো হতে পারে।
এ ছাড়া কর্মসংস্থান বাড়াতে ব্যবসায়ীদের খুশি করার জন্য কর প্রণোদনাসহ নানা পদক্ষেপের ঘোষণা আসছে।
নিজের তৃতীয় বাজেট প্রসঙ্গে নিউজবাংলাকে অর্থমন্ত্রী বলেন, বাস্তব অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই এবারের বাজেটের নাম দেয়া হয়েছে ‘জীবন ও জীবিকার বাজেট’।
প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে দেশের অর্থনীতিকে যেমন আগের চেহারায় ফিরিয়ে আনা হবে, তেমনি দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষকে টিকা প্রদানসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জীবন বাঁচিয়ে জীবিকার সংস্থান করা হবে।
এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ে বিশাল ঘাটতি থাকবে। সে জন্য নতুন বাজেটে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণে বেশি জোর দিতে হবে। ঘাটতি নিয়ে বেশি চিন্তা না করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকতে হবে।’
সাবেক অর্থসচিব ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, বাজেটের লক্ষ্য শুধু সরকারের আয় ও ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা নয়। এর লক্ষ্য হলো দেশের জনগণের জন্য গ্রহণযোগ্য একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘করোনায় মন্দা অর্থনীতি চাঙা করতে সরকারি ব্যয় আরও বাড়াতে হবে। গরীব মানুষের মাঝে অধিকতর নগদ ও খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া দরকার। আয়ের ক্ষেত্রে সরকার খুবই দুর্বল। ফলে আয় বাড়াতেই হবে। করোনা মোকাবিলায় একটি পূর্ণাঙ্গ পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা জরুরি।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রান্তিক উদ্যোক্তাদের জন্য কম সুদে ঋণ ও কর ছাড়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল
বাজেটের আকার
করোনা মোকাবিলায় অর্থনীতি চাঙা করতে অধিক ব্যয়ের জন্য একটি সম্প্রসারণমূলক বাজেট দেয়ার কথা বলেছেন দেশের বরেণ্য অর্থনীতিবিদরা।
যতদূর সম্ভব সেই পথেই হাঁটছেন অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল।
অর্থবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নতুন বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের চেয়ে প্রায় ৬ শতাংশ এবং সংশোধিত বাজেটের চেয়ে প্রায় ১১ শতাংশ বেশি। প্রস্তাবিত বাজেট জিডিপির প্রায় সাড়ে ১৭ শতাংশ।
সম্পদের সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বেশি খরচের লক্ষ্য নিয়ে বিশাল একটি ঘাটতি বাজট (আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি) দিতে যাচ্ছেন মুস্তফা কামাল। এবার ঘাটতি ধরা হচ্ছে জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা।
চলতি অর্থবছরের (যে অর্থবছর শেষ হতে যাচ্ছে) মূল বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। আর ঘাটতি ছিল জিডিপির ৬ শতাংশ। পরে তা সংশোধন করে নির্ধারণ করা ৫ লাখ ৩৯ হাজার কোটি টাকা।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, বাজেটের আকার বড় ঘোষণা করা হলেও খরচ তার চেয়ে অনেক কম হয়। কারণ, আমাদের বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।
এতদিন সাধারণত জিডিপির ৫ শতাংশ ঘাটতি ধরে বাজেট করা হয়েছিল। কিন্তু করোনাকালীণ অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি চাঙা করতে দুটি বাজেটেই ঘাটতি ৬ শতাংশের বেশি ধরা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য্য বলেন, মন্দা পরিস্থিতিতে ‘সম্প্রসারণমূলক’ বাজেট প্রণয়ন করাই হবে সরকারের জন্য উত্তম।
অর্থায়ন
বিশাল ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশ থেকে ঋণ নিয়ে বাজেটে অর্থায়ন করা হবে। অভ্যন্তরীণের মধ্যে আবার ব্যাংক ব্যবস্থা এবং সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে ঋণ নেয়া হবে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে মোট ঋণ আসবে ১ লাখ ১৩ হাজার ৪৫৩ কোটি টাকা।
এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নেয়া হবে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা। ৩২ হাজার কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ৫ হাজার ১ কোটি টাকা আসবে অন্যান্য খাত থেকে।
অপরদিকে, বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে ৯৭ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকা।
সবমিলিয়ে দেশি এবং বিদেশি উৎসে থেকে মোট ২ লাখ ১১ হাজার ১৯১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে নতুন বাজেটে অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে। এসব ঋণের জন্য সরকারকে সুদ দিতে হবে মোট ৬৮ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা।
রাজস্ব প্রাপ্তি
নতুন বাজেটে মোট রাজস্ব প্রাপ্তি বা আয় প্রাক্কলন করা হচ্ছে মোট ৩ লাখ ৯২ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। এর বড় অংশই যোগান আসবে এনবিআর থেকে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
অবশিষ্ট টাকা আসবে এনবিআর বহির্ভূত খাত এবং বৈদেশিক অনুদান থেকে। এর পরিমাণ ৬২ হাজার কোটি টাকা।
প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, নতুন বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার নির্ধারণ করা হতে পারে ৭ দশমিক ২ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরে মূল বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয় ৮ দশমিক ২ শতাংশ। সরকার আশা করছে, চলতি অর্থবছরে এটি হতে পারে ৬ শতাংশের সামাণ্য বেশি, যদিও অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ উন্নয়ন সহযোগীরা তা গ্রহণ করেন নি।
গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনোমিক মডেলিং (সানেম)-এর নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিস রায়হান মনে করেন, প্রবৃদ্ধির দিকে না থাকিয়ে বাজেটে জীবন-জীবিকাকে প্রাধান্য দিতে হবে।
কর বিষয়ক যে সব সুবিধা থাকতে পারে
এনবিআর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে ,করোনাকালীন সংকট মোকাবিলায় অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে একটি ব্যবসা-বান্ধব বাজেট উপহার দেবে সরকার।
নতুন কোনো করারোপ না করে করের আওতা বাড়ানো হচ্ছে। সহজ করা হচ্ছে আইন-কানুন।
বর্তমানে ১৩টি বিষয়ে টিআইএন বাধ্যতামূলক রয়েছে। নতুন বাজেটে আরও তিনটি খাতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ডাকঘর সঞ্চয় স্কিম, বাড়ি বানানোর নকশা অনুমোদন ও সমবায় সমিতির নিবন্ধন করা।
কর্মসংস্থান বাড়াতে করপোরেট কর আড়াই শতাংশ কমছে। ১০ শতাংশ কর দিয়ে বিভিন্ন খাতে ঢালাওভাবে কালো টাকা সাদা করার বিদ্যমান সুযোগ আগামী বাজেটেও অব্যাহত রাখার প্রস্তাব থাকতে পারে।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের আয় করে ছাড় দেয়া না হলেও ধনীদের ওপর সারচার্জ বাড়ছে। ৫০ কোটি টাকার বেশি সম্পদশালীদের সারচার্জ ৩০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশ করা হচ্ছে।
ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণে আইটি খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা আরও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ২২টি খাত কর অব্যাহতি পাচ্ছে। নতুন করে আরও পাঁচটি খাতে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে: মোবাইল অ্যাপস ডেভলপমেন্ট, ই-লার্নিং প্লাটফর্ম, ই-বুক পাবলিংকেশন, ক্লাউড সার্ভিস সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন এবং ফ্রিল্যান্সিং।
দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় আমদানি বিকল্প নির্ভর শিল্প টেলিভিশন, ফ্রিজের উৎপাদন পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর সুবিধা আগামী ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত অব্যাহত থাকছে।
এ ছাড়া কৃষি প্রক্রিয়াজাত ফল, দুগ্ধ উৎপাদন, গৃহস্থালি পণ্য যেমন রাইস কুকার, ওভেন, ব্লেন্ডার শিল্প স্থাপন করলে ১০ বছর কর অবকাশ সুবিধা পাওয়া যাবে। এ ছাড়া এসব পণ্যের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর অব্যাহতি পাচ্ছে।
ঢাকার বাইরে নতুন করে ২৫০ শয্যার হাসপাতাল-ক্লিনিক নির্মাণ করলে ১০ বছর কোনো কর দিতে হবে না।
শেয়ার বাজারের জন্য থাকছে সুখবর। এ খাতে কালো টাকা সাদা করার বর্তমান সুযোগ বহাল থাকতে পারে। শেয়ার বাজারে বর্তমানে তালিকাভূক্ত কোম্পানির করপোরেট কর হার ২৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে সাড়ে ২২ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
বর্তমানে ব্রোকারেজ হাউজের শেয়ার লেনদেনের বিপরীতে উৎসে কর দশমিক ০৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে দশমিক ০১৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। কমতে পারে ট্রেজারি বন্ডের কর।
মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাটে পরিবর্তন আসছে। উৎপাদনমুখী শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের আগাম কর ৪ শতাংশের পরিবর্তে ১ শতাংশ কমছে। এ ছাড়া ভ্যাট ফাঁকির জরিমানা বর্তমানের দ্বি-গুণের পরিবর্তে এক-গুণ করা হচ্ছে এবং বিলম্বের জন্য জরিমানা ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে।
ব্যক্তিমালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভ-লোকসানের ভিত্তিতে ন্যূনতম কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব থাকছে।
নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ভালো খবর আসছে। তাদের উৎসাহিত করতে বার্ষিক লেনদেনের কর অব্যাহতি সীমা বর্তমানের ৫০ লাখ টাকার পরিবর্তে ৭০ লাখ টাকায় উন্নীত করা হচ্ছে।
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমন: প্রতিবন্ধী, আদিবাসি, তৃতীয় লিঙ্গ, রূপান্তরিত নারী-পুরুষদের কোনো প্রতিষ্ঠান চাকরি দিলে ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য করপোরেট কর বর্তমানের চেয়ে ৫ শতাংশ ছাড়ের প্রস্তাব থাকছে নতুন বাজেটে।